লাভ-ক্ষতির হিসেবে বসেছে গোটা বিশ্ব
১৩ জুন ২০২৫ তারিখে ইসরায়েল গোপনভাবে ইরানের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল পারমাণবিক ও সামরিক সংস্থার অবকাঠামো এবং বড় কয়েকজন পদস্থ কর্তাব্যক্তির বাসভবন । ইরানের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৪ জুন তারা ইসরেলের আকাশসীমায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুঁড়েছে, যদিও এদের অধিকাংশ নিষ্ক্রিয় হয়েছে ।
দুই দিনের টানাপোড়েন ও লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলার পর ২২ জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় – নামকরা ফোর্ডো, নাটাঞ্জ ও ইসহাফান কেন্দ্রগুলি। এই অভিযান ‘Operation Midnight Hammer’ নামে পরিচিতি পায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণ ও ভূমিকা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে ইরানের পারমাণবিক প্রযুক্তি শক্তিশালী হওয়ার ভয়কে কেন্দ্র করে সক্রিয় হস্তক্ষেপ করে ।
ট্রাম্প প্রশাসন তার ‘maximum pressure’ নীতি অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক প্রচেষ্টাকে নিরর্থক করার চেষ্টা চালায় ।
নাটাঞ্জ ও ফোর্ডোতে অনেক ক্ষতি হলেও, মার্কিন গোয়েন্দা মতে আসল সক্ষমতা (যেমন কেন্দ্রীয় পরিমাণে ইউরেনিয়াম বা কেন্দ্রিপিউজ) এখনও অক্ষত রয়েছে—কয়েক মাসেই পুনরুদ্ধার সম্ভব ।
কিভাবে একে‑অপরকে আক্রমণ করল
- ইসরায়েল প্রথমে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যে বিমান হামলা চালায়, শীর্ষ আইআরজিসি অফিসারদের হত্যা করে ।
- ইরান পাল্টা আক্রমণে ইসরেলের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন চালায়, যদিও অধিকাংশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দেয় ।
- যুক্তরাষ্ট্র ২২ জুন রাতে B‑2 বোমা এবং টমাহক মিসাইল দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলা চালায় ।
লোকসান ও লাভের হিসেব
পক্ষ | মানবিক ক্ষতি | অবকাঠামোগত ক্ষতি | মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি গুরত্ব |
ইরান | প্রায় ৬০০+ বেসামরিক নিহত | পারমাণবিক লক্ষ্য বস্তুতে “সামান্য” ত্রুটি; কেন্দ্রীয় ক্ষমতা অক্ষত | রাজনৈতিকভাবে ক্ষোভ, ইসলামি শাসনে কঠোরতা; থোড়াই সময় nuclear প্রোগ্রাম বিলম্ব; আন্তর্জাতিক একাকিত্ব |
ইসরায়েল | প্রায় ২৮ বেসামরিক হতাহতের খবর | ক্ষুদ্রাপেক্ষী ক্ষতি | সামরিকভাবে পারমাণবিক হুমকি নিয়ন্ত্রণে, রাজনৈতিক উত্থান; কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ |
যুক্তরাষ্ট্র | কোনো সামরিক বা বেসামরিক জনগণের মৃত্যু রিপোর্ট নেই | সামান্য ক্ষতি | ইরানের পারমাণবিক গতিশীলতা বিলম্ব করল; মিত্র ইসরায়েলের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক দৃঢ় |
কিভাবে যুদ্ধবিরতি হলো?
২৪ জুন ২০২৫ তারিখে সংস্থাপিত হলো একটি ছয়‑ধাপে যুদ্ধবিরতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি মধ্যস্থতা করেন । কাতারের সীমান্তে অবস্থিত রাজকীয় কুটনীতিকেরা ইরানের ঐক্য ও মান্যতা অর্জনে ভূমিকা নেয় । পারমাণবিক ও সামরিক কার্যক্রম স্থগিত, ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুদিকই যুদ্ধ থামায় সম্মত হয় । যদিও কিছু ভাঙচুর ও গোলা-বর্ষণ চলতে থাকে, তারপরও প্রধান যুদ্ধবিরতি কার্যকর দেখায় ।
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক লাভ ও ক্ষতি
- লাভ
- যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রাম বিলম্ব করতে সফল; আত্মবিশ্বাসী কূটনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা ফোকাসে উঠে এক ধাপ এগিয়ে যায় ।
- ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ়, ভবিষ্যতের সহযোগিতার পথ সুগম করে ।
- ক্ষতি ও ঝুঁকি
- যুদ্ধবিরতি চুক্তির দীর্ঘ মেয়াদি স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ—উভয় পক্ষের মধ্যেই শর্তবিরোধ ও পুনরায় আক্রমণ হতে পারে ।
- আন্তর্জাতিক চাপ ও আইএইএ তদন্তের পুনরুজ্জীবিত প্রয়াস; তেল বাজারে অস্থিরতা ।
১২‑দিনব্যাপী ইসরায়েল‑ইরান সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করে দুই পক্ষের আক্রমণ বন্ধ করিয়ে দেয়। মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় গুরুতর ক্ষতি সাধিত হলেও মূল ক্ষমতা অক্ষত থাকায় ভিত্তিমূল সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। মানবিক ভাবে ইরান উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হলেও, ইসরায়েল সামান্য জনহানি সহ সামরিক দিক থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে লাভবান। বর্তমান যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হলেও দুই দেশের মধ্যে দূরদর্শী শান্তি ও কোন্দল নিরসনে এখনো অনেক বাধা রইল।